প্রত্যয় ডেস্ক: মানুষের অদৃশ্য শত্রু করোনা ভাইরাস বদলে দিয়েছে গোটা বিশ্বের দৃশ্যপট। টালমাটাল জীবনযাত্রা। কবে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে নেই তারও কোনো দিশা। একদিকে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ভ্যাকসিন যে মিলবেই তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এমনই এক পরিস্থিতিতে নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তদের থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনে গৃহহীনদের জন্য তৈরি শিবিরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৭ জন। কিন্তু ৮৮ শতাংশেরই কোনো উপসর্গ নেই। আরক্যানসের একটি পোল্ট্রি ফার্মে সম্প্রতি সংক্রমিত হয়েছেন ৪৮১ জন— উপসর্গহীন ৯৫ শতাংশ। নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহায়ো এবং ভার্জিনিয়ার জেলে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। এখানেও ৯৬ শতাংশের শরীরে কোনো কোভিড-উপসর্গ নেই। তাহলে কি দুর্বল হচ্ছে নোভেল করোনাভাইরাস? মহামারি এখন শেষ পর্যায়ে? মানুষের অজান্তেই তৈরি হচ্ছে ‘হার্ড ইমিউনিটি’?
এমনই আশা দেখছেন ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ মণিকা গান্ধী। তিনি বলছেন, ‘‘আক্রান্তদের এত বড় অংশের মধ্যে উপসর্গহীনতা নিশ্চিত ভালো খবর।’ এরআগে উপসর্গহীনদের নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনও। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের ৪০ শতাংশ উপসর্গহীন। ভাইরাস মোকাবিলায় হয়তো মানুষের শরীরে তৈরি হচ্ছে ‘মেমরি’ টি-সেল। যার ফলে এক সময় যা ছিল ‘নভেল’ বা নতুন ভাইরাস, তা এ বার চেনা শত্রু হিসেবে প্রতিপন্ন হচ্ছে। ফলে লড়াইটা সহজ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, শৈশবে বিসিজি জাতীয় টিকাও হয়তো কিছু ক্ষেত্রে ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিংবা সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দায়ী অন্য করোনাভাইরাসের সঙ্গে আগের লড়াই কাজে লাগছে এখন।
এসব বিষয় নিয়ে আশার আলো দেখা গেলেও ভয় কাটছে না এখনই। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শক্তিধর দেশগুলোকেও বিপর্যস্ত করে তুলেছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস।করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও ২ কোটি ছাড়িয়ে গেল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ২৩ হাজার ১৬। এর মধ্যে মারা গেছে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৬ জন। তবে করোনা থেকে সুস্থতার হারও কম নয়। ইতোমধ্যেই আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছে। করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যা ১ কোটি ২৮ লাখ ৯৭ হাজার ৮১৩।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে তাণ্ডব চালাচ্ছে এই ভাইরাস। তবে করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সবগুলো অঙ্গরাজ্যেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ।